সকালে ঘুম ভাঙতে না পারা: অলসতা নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের সংকেত
রাতভর গভীর ঘুম হলেও সকালে অ্যালার্ম বাজানোর পরও বিছানা ছাড়তে কষ্ট হয়—এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই। সাধারণত এটিকে অলসতা বা কাজ ফাঁকি দেওয়ার অজুহাত বলা হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বিষয়টি এত সহজ নয়। নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে উঠতে না পারা অনেক সময় মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার ইঙ্গিত বহন করে।
ঘুম শরীর ও মনের পুনর্গঠন করে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে তার প্রভাব পড়ে দৈনন্দিন জীবনে। সারাদিন ক্লান্তি, মনোযোগের ঘাটতি, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া কিংবা মন খারাপ—সবকিছুই এর সঙ্গে যুক্ত।
কেন ঘুম ভাঙে না
শারীরিক কিছু সমস্যা যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া, নার্কোলেপসি বা ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোমের কারণে এমন হতে পারে। ঘুম প্যারালাইসিসও এর একটি কারণ হতে পারে। তবে শারীরিক অসুস্থতা না থাকলেও মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যার প্রভাবও কম নয়।
মানসিক স্বাস্থ্য ও ঘুমের সম্পর্ক
-
ডিপ্রেশন: দীর্ঘস্থায়ী দুঃখবোধ, ক্ষুধা ও ঘুমের অনিয়মের সঙ্গে সকালে বিছানা ছাড়তে অনীহা বাড়ায়।
-
অ্যাংজাইটি: উদ্বেগে রাতে গভীর ঘুম হয় না, ফলে সকালে কাজে মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
-
বাইপোলার ডিসঅর্ডার: কখনো অনিদ্রা, কখনো অতিরিক্ত ঘুম—দুটিই হতে পারে।
-
সিজনাল অ্যাফেকটিভ ডিসঅর্ডার: শীতকালে সূর্যালোক কম থাকায় অতিরিক্ত ঘুম ভাব দেখা দেয়।
-
এডিএইচডি: ঘুম ভাঙলেও শরীরে শক্তি অনুভূত হয় না।
-
পিটিএসডি: দুঃস্বপ্ন বা ফ্ল্যাশব্যাকে ঘুম ব্যাহত হয়, সকালে ক্লান্তি বাড়ায়।
করণীয়
-
কাছের মানুষকে সমস্যার কথা বলুন বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
-
সুষম খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
-
ঘুমের আগে মোবাইল-টিভির ব্যবহার এড়িয়ে চলুন, কফি ও অ্যালকোহল কমান।
-
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো ও জাগার অভ্যাস করুন।
-
প্রয়োজনে লাইট থেরাপি বা ডে-লাইট অ্যালার্ম ব্যবহার করুন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সকালে নিয়মিত ঘুম ভাঙতে সমস্যা হলে এটিকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। এটি কেবল অলসতা নয়, মানসিক স্বাস্থ্যেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। তাই দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসা ও সমাধানের পথে এগোনো জরুরি।
0 Comments